মাহমুদুল হক বাবুল, উখিয়া::
উখিয়া-টেকনাফ উপকূল দিয়ে সাগর পথে অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার কিছুতেই থামছে না। মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অল্প টাকায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে সোনার হরিণ ধরার প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল লোকজনদের উখিয়া-টেকনাফ উপকূলে জড়ো করে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে থাকে। মাঝে মধ্যে পুলিশ-বিজিবির অভিযানে গুটি কয়েক ভিকটিম আটক হলে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের গডফাদাররা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গডফাদাররা ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় পাচার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। গত দু’বছরে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা প্রায় লক্ষাধিক লোককে পাচার করা হয়েছে।
জানা যায়, দালালরা এলাকার সহজ সরল লোকজনদের প্রলোভনে ফেলে এবং জোর করে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে থাকে। যার ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মালয়েশিয়া মানব পাচারকারী দালাল উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের জাগির হোছনের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ, মনখালী গ্রামের কামাল হোসেন, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের আবুল কালাম, রুস্তম আলী, ফরিদ মাঝি, আবু ছিদ্দিক, মুজিবুল হক, আলী আকবর, জুম্মা পাড়া গ্রামের নুরুল আলম, নলবনিয়া গ্রামের সোনালী, জুম্মা পাড়া গ্রামের মৃত কবির আহমদের ছেলে নুরু, টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ এলাকার জালাল আহমদের ছেলে সৌরব হোসেন প্রকাশ শরীফ ও এজাহার মিয়ার ছেলে মনির দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। মানব পাচার করে তারা রাতারাতি কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
চিহ্নিত মানব পাচারকারী উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের জাগির হোছনের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ একই গ্রামের মকবুল আহমদের ছেলে মোঃ ইসমাঈলকে বিগত এক মাস পূর্বে বেড়ানোর কথা বলে উখিয়ার ইনানীতে নিয়ে যায়। পরে অন্যান্য দালালদের সহযোগিতায় জোর পূর্বক মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে দেয় বলে ঈসমাইলের বাবা মকবুল আহমদ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এর পর ছেলে উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে ৩লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। দালালদের চাহিদামত মুক্তিপন না দিলে ঈসমাইলকে হত্যা করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে দালাল হানিফ। দালালদের এমন হুমকিতে চরম আতংকে রয়েছে ইসমাঈলের পরিবার। মকবুল আহমদ বলেন, দালাল হানিফ এখান থেকে লোকজন সংগ্রহ করে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে দেয় এবং মালয়েশিয়া থেকে তার ভাই ফারুক তাদেরকে আটকিয়ে রেখে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে। এছাড়াও উক্ত দালালরা উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের জুম্মা পাড়া গ্রামের বদি আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (১৫)কে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে দেয়। সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় আবদুল্লাহ আলম মামুন নিহত হয়েছে বলে তার মা ছকিনা খাতুন অভিযোগ করে জানিয়েছেন। ছকিনা বলেন, উক্ত দালালরা আমার ছেলের মতো অনেককে জোর পূর্বক মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে সাগরে ফেলে দিয়েছে আবার অনেককে থাইল্যান্ডে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, শাহপরীরদ্বীপের চিহ্নিত দালাল সৌরব ও মনির দীর্ঘদিন ধরে এ কাজে জড়িত হওয়ার কারণে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পুলিশ, বিজিবি, কোষ্টগার্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রশাসনের সোর্স পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, মনির ও সৌরব তারা ছিল সামান্য জেলে। তারা মানব পাচার করে বনে গেছে কোটিপতি। কালো টাকার প্রভাবে তারা এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপকর্মে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দালালদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিবাদ করলে তারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া, মারধর ও খুন সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে উখিয়া ও টেকনাফ উপকূল দিয়ে মানব পাচার প্রকট আকার ধারণ করে। দালালদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় অনেকের সাগরে সলিল সমাধি ঘটেছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ অংসা থোয়াই বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে পুলিশ সবসময় প্রস্তুত রয়েছে এবং মানব পাচারকারীকে আটক করে জেল হাজতেও পাঠানো হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় নিহতের ব্যাপারে আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তার আহমদ জানান, প্রতিনিয়ত পুলিশের হাতে মানবপাচারকারী দালাল ও ভিকটিম আটক হচ্ছে। মানব পাচার প্রতিরোধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পাঠকের মতামত